Header Ads

Header ADS

ডায়াবেটিসের জটিলতাকে চিনুন


এটি একটি নীরব ঘাতক। নীরব এ জন্য যে প্রাথমিক তেমন কোনো উপসর্গ না থাকলেও রক্তের উচ্চমাত্রার শর্করা দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে থাকে নিভৃতে। একসময় তা মারাত্মক জটিল আকার ধারণ করে জীবন বিপন্ন করে দেয়। এ রোগের নাম ডায়বেটিস।

একজন ডায়াবেটিক রোগীর অন্যদের চেয়ে হূদেরাগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ বেশি, স্ট্রোক বা পক্ষাঘাত হওয়ার ঝুঁকি ছয় গুণ , কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি পাঁচ গুণ, অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ২৫ গুণ এবং পায়ে গ্যাংগ্রিন হয়ে পা হারানোর আশঙ্কা ২০ গুণ বেশি। এসব ঝুঁকি, আশঙ্কা ও সম্ভাবনা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয় একজন ডায়াবেটিক রোগীকে। তবে এসব ঝুঁকির অনেক কিছুই তিনি প্রতিরোধ করতে পারেন, যদি রোগ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকে। ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এ বছর এই দিবসের স্লোগান হচ্ছে: ডায়াবেটিসের জটিলতাকে চিনুন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করুন।

ডায়াবেটিস কি নিয়ন্ত্রণে আছে?ডায়াবেটিস-জনিত জটিলতা ঠেকানোর প্রধান উপায় হলো রক্তে শর্করা যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। এ নিয়ে রোগীদের কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে। কেননা, রক্তে শর্করা অনেক বেশি বেড়ে না গেলে সাধারণত বেশি পিপাসা, ঘন ঘন প্রস্রাব বা ওজন হ্রাসের মতো উপসর্গ দেখা দেয় না। কোনো উপসর্গ না দেখা দেওয়ার মানে এই না যে শর্করা নিয়ন্ত্রণে আছে। নিয়ন্ত্রণ মানে হলো অব্যাহতভাবে রক্তে শর্করার পরিমাণ খালি পেটে ৬ মিলিমোল বা তার কম, খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ৮ মিলিমোলের কম এবং তিন মাসের গড় শর্করা এইচবিএওয়ান সি ৭ শতাংশের কম থাকা। এর ব্যতিক্রম হলেই শুরু হবে নানা জটিলতা। রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রিত আছে কি না এবং কোনো রকমের সম্ভাব্য জটিলতা দেখা দিচ্ছে কি না—এ দুটি বিষয়ে সচেতন থাকতে হলে নিয়মিত রোগীর নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বাড়িতে সপ্তাহে এক বা দুই দিন গ্লুকোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে নিজের রক্তের শর্করা পরীক্ষা করা, তিন মাস পর পর গড় শর্করার পরিমাণ পরিমাপ করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ছাড়াও অন্তত বছরে একবার বা দুবার প্রস্রাবে আমিষ ও মাইক্রোঅ্যালবুমিনের পরিমাণ, রক্তে চর্বির পরিমাণ ও কিডনি কার্যকারিতার মাপক ক্রিয়েটিনিন নির্ণয় করা, চোখের চিকিৎসকের কাছে রেটিনা পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের কাছে পা দুটি পরীক্ষা করানো জরুরি। এসব অঙ্গে কোনো রকম জটিলতার লক্ষণ দেখা দিলে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং আরও ঘন ঘন পরীক্ষাগুলো করে নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা উচিত। এর সঙ্গে অবশ্যই রক্তচাপ ও রক্তে চর্বি নিয়ন্ত্রণ করার কথাও মনে রাখতে হবে। তা ছাড়া রোগীকে শিখে নিতে হবে কীভাবে পায়ের যত্ন নিতে হয় এবং কোন কোন পরিস্থিতিতে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এভাবে প্রতিনিয়ত সচেতন ও সজাগ থাকলে তবেই জটিলতা এড়ানো সম্ভব। 


প্রতিরোধ করা কি সত্যি সম্ভব
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বলছেন, টাইপ-২ ডায়াবেটিস ৭০ শতাংশ প্রতিরোধ করা সম্ভব। অথচ এ রোগ এখন মহামারীর মতো বেড়ে চলেছে। এখনই প্রতিরোধ না করা গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ৫৫ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর এই বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি দেখা যাবে উন্নয়নশীল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। এই মহামারীর হাত থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে তাই দরকার জীবন যাপনে স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন, পুষ্টিকর পরিমিত খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মিত কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে শরীরকে ঠিক রাখা, যথাযথ স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পর্যবেক্ষণের সুযোগ। ওজন বেড়ে যাওয়া ও স্থূলতা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, পারিবারিক ইতিহাস, কায়িক শ্রমের অভাব, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মাতৃগর্ভে শিশুর অপুষ্টিসহ নানা কারণ ডায়াবেটিস হওয়ার জন্য দায়ী। সবকিছুর পরেও একমাত্র সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত জীবনাচরণই পারে এই রোগকে প্রতিরোধ করতে।

লেখক:
 তানজিনা হোসেন |  
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ,
বারডেম হাসপাতাল 
Prothom-Alo নভেম্বর ১৩, ২০১৩




For Add Edit or Remove your data, Please mail me...
Md. Nazmul Huda
Narayanganj, Bangladesh.
My E-mail: whereindoctor@gmail.com


Powered by Blogger.